বাংলাদেশের নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতায় জামাতে ইসলামীর অবস্থান: একটি মূল্যায়ন

– মোহাম্মদ আব্দুল কাহার

সম্প্রতি ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের পতন দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে। এই পরিবর্তনের প্রেক্ষিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তাদের অবস্থান পুনর্বিবেচনা এবং পুনর্গঠনের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। এর মধ্যে জামাতে ইসলামীর সাম্প্রতিক পদক্ষেপ ও বক্তব্য বিশেষভাবে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে।

জামাতে ইসলামীর আমির সম্প্রতি আওয়ামী লীগকে “সাধারণ ক্ষমা” ঘোষণা করেছেন, যা রাজনৈতিক অঙ্গনে বেশ চমক সৃষ্টি করেছে। অনেকেই এই পদক্ষেপের পেছনে লুকানো কৌশল নিয়ে আলোচনা করছেন। দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে জামাতে ইসলামী সবসময়ই জোটভিত্তিক রাজনীতিতে বিশ্বাসী ছিল। অতীতে তারা আওয়ামী লীগের সঙ্গেও জোট গঠনের চেষ্টা করেছে, যদিও আদর্শিকভাবে দুই দলই ভিন্ন মেরুর বাসিন্দা। সময়ের প্রয়োজনে রাজনৈতিক সমঝোতা করার এই প্রবণতা জামাতে ইসলামীর রাজনীতিতে নতুন কিছু নয়।

তবে, জামাতে ইসলামীর অতীত কর্মকাণ্ড এবং বর্তমান পদক্ষেপ নিয়ে দেশের সাধারণ মুসলমান এবং আলেম সমাজের বড় অংশ বরাবরই সন্দিহান। বিশেষ করে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার সময় তাদের ভূমিকা এবং রাজনৈতিক অবস্থান দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর কাছে বিতর্কিত ছিল। অনেক সাধারণ মানুষ এবং আলেম সমাজের বিশিষ্টরা মনে করেন, জামাতে ইসলামীর আদর্শিক অবস্থান এবং চিন্তাভাবনা মূলধারার ইসলামী শিক্ষার সাথে পুরোপুরি সঙ্গতিপূর্ণ নয়। এ কারণেই দেশের আলেম সমাজের একটি বড় অংশ তাদের মতবাদ এবং রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডকে বরাবরই সমালোচনার চোখে দেখেছে এবং তা আজও বিদ্যমান।

জামাতে ইসলামীর সাম্প্রতিক পদক্ষেপ নিয়ে অনেকেই ভাবছেন, তারা কি এই মুহূর্তে আওয়ামী লীগের সঙ্গে পুনরায় কোনো রাজনৈতিক সমঝোতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে? এছাড়াও, কেউ কেউ সন্দেহ করছেন যে, দলটি ভারতের সহানুভূতি অর্জনের চেষ্টা করছে, যাতে ভারত তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে রাজনৈতিক সহযোগিতা প্রদর্শন করে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ভারতের ভূমিকা বরাবরই গুরুত্বপূর্ণ, এবং এ ধরনের কৌশলগত পদক্ষেপকে সহজভাবে নেওয়া সম্ভব নয়।

জামাতে ইসলামীর সামনে এখন বড় চ্যালেঞ্জ হলো, তারা কি আসলেই দেশের সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জন করতে পারবে? তাদের অতীতের বিতর্কিত ভূমিকা, স্বাধীনতার সময়কালীন অবস্থান, এবং বর্তমানের এই নতুন রাজনৈতিক কৌশল—এসবকিছুর মধ্য দিয়ে দলটি কতটা সফল হতে পারবে, তা সময়ই বলে দেবে। দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ এবং সামাজিক স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে তাদের ভূমিকা কতটা গঠনমূলক হবে, তা এখন গভীর পর্যবেক্ষণের দাবি রাখে।